পাসপোর্ট আবেদন করার সময় ভুল তথ্য দেয়ার কারণে পাসপোর্টের তথ্য ভুল এসেছে? পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করলে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পড়ুন।

পাসপোর্ট আবেদন করার সময় ভুলের কারণে অনেক সময় আমরা ভুল তথ্য দিয়ে থাকি। ভুল তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট হওয়ার পর পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যখন দেখা যায় পাসপোর্টের তথ্য ভুল, তখন সেটি আবারও সংশোধন করতে হয়। পাসপোর্ট সংশোধন না করলে সেটি ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন পার করা সম্ভব নয়।

তাই, যাদের পাসপোর্টের তথ্য ভুল এসেছে, তারা এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে নিজেই অনলাইনে ভুল তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলুন, বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে

পাসপোর্টে থাকা ভুল তথ্য সংশোধন করার জন্য নতুন ই পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র লাগবে এগুলো হচ্ছে —

  1. ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  2. 3R সাইজের ছবি
  3. অঙ্গিকারনামা
  4. আবেদনের সারাংশ প্রিন্ট কপি
  5. পূর্বের পাসপোর্ট এবং সেটির ফটোকপি
  6. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ডকুমেন্ট
  7. পরীক্ষার সনদপত্র বা স্টুডেন্ট আইডি কার্ড (শিক্ষার্থী হলে )
  8. মেয়র বা চেয়ারম্যানের থেকে নেয়া নাগরিক সনদপত্রের কপি
  9. NOC (No Objection Certificate) বা GO (Government Order) (সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)
  10. ই পাসপোর্ট আবেদনের অনলাইন প্রিন্ট কপি
  11. ঠিকানা যাচায়ের জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি
  12. টিকাদান কার্ড (শিশুদের ক্ষেত্রে)
  13. পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি (ক্ষেত্রবিশেষে)
  14. নিকাহনামা বা কাবিননামা (বিবাহিত হলে )
  15. আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্‌ট করে পাওয়া এ-চালান এর কপি
  16. স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি (পাসপোর্টে SPOUSE NAME যুক্ত করতে চাইলে)

পাসপোর্ট সংশোধন করার জন নতুন করে পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় আপনার পূর্বের একটি পাসপোর্ট রয়েছে সেটি সিলেক্ট করতে হবে এবং তথ্য সংশোধন করার জন্য DATA Change অপশন সিলেক্ট করতে হবে। নিম্নে বিস্তারিত পদ্ধতি উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

ই পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম

ই পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য E-Passport Online Registration Portal ওয়েবসাইট ভিজিট করে জেলা এবং থানার নাম সিলেক্ট করে পাসপোর্ট অফিস যাচাই করতে হবে। অতঃপর, একটি ইমেইল অ্যাড্রেস লিখে পরবর্তী ধাপে গিয়ে পাসওয়ার্ড এবং NID অনুযায়ী নাম, মোবাইল নাম্বার লিখতে হবে। এরপর, ইমেইল চেক করে পাওয়া লিংকে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে উক্ত ই-মেইল অ্যাড্রেস এবগ্ন পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। লগইন করার জন্য Apply for a new e-Passport অপশনে ক্লিক করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার প্রক্রিয়া জানতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।

উপরোক্ত বাটনে ক্লিক করে একদম নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার মতো করেই আবেদন করুন। আবেদন করার সময় উক্ত পোস্টে উল্লেখ করে দেয়া ধাপ ৫ — আইডি তথ্য পূরণ করার সময় আপনার পূর্বের একটি পাসপোর্ট আছে সেটি সিলেক্ট করতে হবে।

আপনার যদি MRP পাসপোর্ট থাকে তবে, Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP) অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। অথবা, আপনার যদি পূর্বের ই-পাসপোর্ট থাকে তবে, Yes, I have an Electronic Passport(ePP) সিলেক্ট করতে হবে।

E-Passport Application Step 11
E-Passport Application Step 11

এরপর, What is the reason for your passport request? লেখার নিচে থেকে আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করার কারণ সিলেক্ট করে দিন। আপনি যেহেতু পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, তাই DATA CHANGE অপশনটি সিলেক্ট করুন।

অতঃপর, আপনার থেকে পূর্বের পাসপোর্ট নাম্বার, ইস্যু এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ জানতে চাইতে পারে বা অন্য তথ্য জানতে চাইতে পারে। সেসব তথ্য দিয়ে বাকী ধাপগুলো উক্ত নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম পোস্টের মতো করেই অনুসরণ করুন।

আবেদন সম্পন্ন হলে ই-পাসপোর্ট আবেদনের মূল কপিটি প্রিন্ট করুন এবং আবেদনের সারাংশ প্রিন্ট করুন। প্রিন্ট করার পর পাসপোর্ট সংশোধন করতে যা যা কাগজপত্র লাগে তার সাথে এই দুইটি প্রিন্ট কপি যুক্ত করতে হবে। এছাড়াও, পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা পূরণ করে সেটিও যুক্ত করতে হবে।

পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা

পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় একটি অঙ্গিকারনামা জমা দিতে হয়। নিম্নে পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গিকারনামা PDF ফাইল যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। Download বাটনে ক্লিক করে ফাইলটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। অতঃপর, সেটি পূরণ করে অন্যান্য কাগজের সাথে এটিও জমা দিন।

মনে রাখতে হবে, পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করার পর অবশ্যই ব্যাংকে পাসপোর্ট সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। আপনি নতুন ই পাসপোর্ট আবেদন করার সময় কত পৃষ্ঠার এবং কত বছর মেয়াদের পাসপোর্ট এর আবেদন করেছেন তার উপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট সংশোধন ফি জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট আবেদন করার সময় যত টাকা ফি দেখানো হয়েছে, একই পরিমাণ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বা অনলাইনে ই পাসপোর্ট সংশোধন ফি জমা দেয়ার নিয়ম অনুসরণ করে জমা দিন। অতঃপর, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কাগজপত্রগুলোর সাথে ব্যাংক জমার স্লিপটিও জমা দিন। অতঃপর, পাসপোর্ট সংশোধন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।

পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করার পর পাসপোর্ট হয়েছে কিনা জানার জন্য ই পাসপোর্ট চেক করতে পারেন। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও, আপনি যদি পাসপোর্ট এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করবে আপনি কত পৃষ্ঠা এবং কত বছর মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য ৪,০২৫ টাকা এবং ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ৬,৩২৫ টাকা। এছাড়াও, ১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য ৫,৭৫০ টাকা এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য ৮,০৫০ টাকা লাগে। তবে ডেলিভারির ধরণ অনুযায়ী পাসপোর্ট সংশোধন ফি কমবেশি হয়।

রেগুলার ডেলিভারি থেকে এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট সংশোধন ফি বেশি লাগবে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ডেলিভারির ধরণ নির্বাচন করুন।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে তা নির্ভর করবে কোন ধরনের ডেলিভারি সিলেক্ট করে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন তার উপর। রেগুলার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ২১ দিন, এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৭ দিন এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৩ দিন সময় লেগে থাকে।

সারকথা

ই পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। যাদের পাসপোর্টে ভুল তথ্য এসেছে, তারা তথ্য সংশোধন করার জন্য পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করতে পারবেন এই পোস্টটি অনুসরণ করে। আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *